স্বাস্থ্য বিষয়

পাইলস কথাটি আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি নাম। আমাদের অনেকেরই পাইলস হয়ে থাকে। আবার অনেকে জানিই না পাইলস হয়েছে কিনা। মলদ্বারের ভেতরে বা মলদ্বারের চার পাশের ত্বকের নিচে এ রোগ হয়ে থাকে। আজকে আমরা জানবো পাইলস কি?, পাইলস এর লক্ষনগুলো, পাইলস কেন হয়?, পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা সহ পাইলস বিষয় সকল তথ্য।

আশা করছি আজকে পাইলস বা অর্শ্বরোগ বিষয় একটি পরিপূর্ন জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

পাইলস কি?

পাইলস আমরা অর্শ্বরোগ নামে চিনে থাকি যার ইংরেজী নাম haemorrhoids. মলাশয়ের নিচের অংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যাওয়াকেই পাইলস বা অর্শরোগ বলে। পাইলস দুই ধরনের ১. আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ হলো ভিতরের দিকে আর বাহ্যিক হলো বাইরের দিকে। পায়ূ পথে বিদ্যমান অঙ্গ রক্তনালী যা মল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফোলা বা প্রদাহ থেকে এগুলো রোগ সংক্রান্ত বিষয় বা পাইলস-এ পরিণত হয়।

পাইলস এর লক্ষনগুলো কি কি?

পাইলস এর অনেকগুলো লক্ষন আছে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পাইলস হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে লক্ষনগুলো হলো: রক্তপাত, মলদ্বারের চারদিকে ফোলা, পায়ুপথ অঞ্চলে চুলকানি ও অস্বস্তি ইত্যাদি। তবে মলের সাথে রক্ত পড়া পাইলসের প্রধান লক্ষণ।

১. রক্ত, পুজ বা রস বের হওয়া।

২. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া।

৩. পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায়, সঙ্গে ব্যথা। অনেক সময়ে ব্যথা না-ও হতে পারে।

৪. মলত্যাগে ব্যথা লাগা বা বসলে ব্যথা করে।

৫. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে।।

৬. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।

৭. পায়খানার রাস্তার রক্তনালী ফুলে যাওয়া।

৮. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে আবার ব্যথা নাও হতে পারে।

৯. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

পাইলস দেখতে কেমন? ছবি

পাইলস আসলে দেখতে কেমন? এখানে কিছু পাইলস এর ছবি দেওয়া হয়েছে।

পাইলস কেন হয়?

পাইলস হওয়ার পিছনে কিছু কারনে আছে যেগুলো থেকে জানা যাবে পাইলস হওয়ার কারন। পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভোগা ও ডায়রিয়া,  মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা, হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধ্যক্য, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস, পেটের ভিতরে চাপ সৃষ্টি, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, ব্যায়াম না করা, এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, অনিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস,  ইত্যাদি। এর সঠিক কারণ জানা না গেলেও সাধারন এ সকল কারনে পাইলস হয়ে থাকে। ওষুধ ও সাবধানতা মেনে চললে এই রোগ সেরে যায়।  তবে, জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।

পাইলস কি ভালো হয়?

সাধারনত সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে চললে পাইলস ভাল হয়। পাইলসের রোগীরা কিছু পদ্ধতি মেনে চললে ভালো থাকতে পারেন। অনেক সময় রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে অপারেশন করতে হয়। আবার বর্তমানে হারবার, হোমিও ও হামদদ চিকিৎসার মাধ্যমেও অপারেশন ছাড়া পাইলস ভাল হয়।

পাইলস রোগীর কি খাবার খাওয়া উচিত?

শাকসবজি: যেমন- কচু শাক, লাল শাক, লাউ, ফুলকপি, টমেটো, রুট বা মূল জাতীয় সবজি: যেমন- মিষ্টি আলু, বিট, কচুর মুখি, গাজর, শসা এবং তরমুজ, বীজ জাতীয় খাদ্য: যেমন- শিম, মসুর ডাল, শিমের বীজ, চিনাবাদাম, আস্ত শস্যদানা, নাশপাতি, আপেল, কলা। এছাড়াও প্রতিদিন বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

যেসব খাবার পাইলস রোগীর এড়িয়ে চলা উচিত

পাইলস রোগীরা শুধু বুঝতে পারবে পাইলসের কষ্ট। তাই পাইলস রোগীর কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন: দুগ্ধজাত পন্য, অ্যালকোহল, কফি, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, তেলে ভাজা খাবার, লাল মাংস, অতিরিক্ত জালযুক্ত খাবার, সাদা আটা ইত্যাদি।

পাইলস রোগে করণীয়?

১. টয়লেটে অধিক সময় বসে না থাকা

২. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা

৩. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

৪. মল ত্যাগে বেশি চাপ না দেওয়া

৫. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা

৭. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা

৮. প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো

৯. বেশি বেশি পানি পান করা

অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা

পাইলস চিকিৎসা বহু ধরনের পদ্ধিতি রয়েছে। শতকরা নব্বই জনেরও বেশি রোগীকে বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করা সম্ভব। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘রাবার রিং লাইগেশন পদ্ধতি। এরপর রয়েছে ইনজেকশনের পদ্ধতি। বিস্তারিত

পাইলস এর ঔষধ

পাইলস এর বিভিন্ন ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। আবার হোমিও ঔষধের মাধ্যমেও পাইলস ভাল হয়। তবে ঔষধ খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পাইলস এর সেরা হোমিও ঔষধ

পাইলোস্প্রে (PiloSpray) এবং পাইলোকিট (PiloKit)

Piles Cure Tablet

যেকোন ঔষধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উত্তম।

পাইলস এর ব্যাথা কমানোর উপায়

বরফঃ পাইলস এর ব্যথা দূর করতে বরফ খুবই কার্যকারী একটি উপায়। একটি কাপড়ে বা একটু বরফ নিয়ে ব্যথার স্থানে রাখুন। দেখবেন ব্যথা দ্রুত শেরে যাচ্ছে।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ একটি তুলোর বলে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগান দেখবেন কিছসময় পরে ব্যথা কমে যাচ্ছে। পাইলস এর জন্য এক চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে দিনে দু’বার খান। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

অ্যালোভেরাঃ দ্রুত ব্যথা কমাতে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।

অলিভ অয়েলঃ অশ্বরোগ নিরাময়ে প্রতিদিন এক চামচ অলিভ অয়েল খান খুবই উপকার পারেন।

আলমন্ড অয়েল : আলমন্ড অয়েল অর্শ বা পাইলসের যন্ত্রণা বা জ্বালা উপশমে অত্যন্ত উপকারী।

আদা এবং লেবুর রসঃ আদাকুচি, লেবু এবং মধু মিশ্রণ দিনে দু’বার খান। ভাল উপকার পাবেন।

ব্ল্যাক টি ব্যাগঃ পাইলসের ফলে মলদ্বার ফুলে উঠলে বা যন্ত্রণা হলে তা কমাতে সাহায্য করে।

পাইলস সারানোর উপায় বা পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘরোয়া উপায়ে পাইলস এর চিকিৎসা বা সারানো সম্ভব। কারো যদি পাইলস হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই বিনা অপারেশনে পাইলসের চিকিৎসা করা সম্ভব। অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা করা সম্ভব। পাইলস থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যেন আপনার মল কখনো শক্ত না হয়। শক্ত না হওয়ার জন্য  আপনার খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনতে হবে।

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরফ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ বরফ দেহে রক্ত চলাচল সচল করতে সহায়তা করে এবং ব্যথা দূর করে থাকে।

এছাড়াও আপনি  ১ গ্লাস পানির সাথে ১ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন। পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা  পালনে নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। মল শক্ত হয় এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।

এখন আমাদের দেশে উন্নত হারবাল চিকিৎসা রয়েছে যার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব। কলিকাতা হারবাল আপনাকে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আস্থা দিচ্ছে যে পাইলস এখন আর কোন বড় সমস্যা নয়। শুধুমাত্র আস্থা নয় কলিকাতা হারবাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে হারবাল পদ্ধতিতে অত্যন্ত নির্ভুলতার মাধ্যমে পাইলস সমস্যার সমাধান করে থাকেন।

অতিরিক্ত গরুর মাংশ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিমাণ মতো আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। পাইলসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পাইলসের লক্ষণ ধরা দেওয়ার পূর্বে এ সকল খাবার খেতে হবে। দরকার হলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পাইলস এর  ঔষধ  গ্রহণ করতে হবে। পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা আপনি বাসায় বসে কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন।

দেশের শীর্ষ স্থানীয় হারবাল চিকিৎসালয় কলিকাতা হারবালের কাছ থেকে চিকিৎসা নিন, নিজেকে সুস্থ রাখুন সাথে নিজের পরিবারকে সুস্থ রাখুন। পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি।

রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়। এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।

Leave a comment