ফল/সবজি

জলপাই বাংলাদেশে একটি সুপরিচিত ফল। বিশেষ করে শীতকালে এই ফলটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচা জলপাই বেশ পুষ্টিকর এবং প্রচুর ভিটামিন ‘সি ’ সমৃদ্ধ। জলপাই সাধারনত আচার বানিয়ে খাওয়া হয়। তবে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিগুন অনেক বেশি। প্রতিদিন কাঁচা জলপাই খাওয়ার অভ্যাস করলে আমাদের স্বাস্থ ভাল থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাড়বে। বর্তমানে স্বাস্থবিদরা , সুস্বাস্থের জন্য জলপাই তেল খাওয়ার কথা বলে থাকেন। কেননা, জলপাই ফলের তেল , পাতা , শিকড় ইত্যাদি দিয়ে অনেক রোগ নিরাময় করা যায়। নিম্নে জলপাই ফলের গুনাগুন ও উপকারিতা সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো। আসুন তাহলে জেনে নেই বিভিন্ন রোগে জলপাইয়ের গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে।

গুনাগুন : জলপাইয়ে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুন। জলপাই খেতে টক হলেও এর গুনাগুন আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। জলপাই একটি  আঁশযুক্ত ফল। এই আঁশ আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে। হজমের পাশাপাশি পাকস্থলী , ক্ষুদ্রান্ত , বৃহদন্ত্র ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে জলপাই। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে ৭০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি , ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘স’ , ৯ দশমিক ৭ শর্করা এবং ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমাদের দেশে জলপাইয়ের আচার বেশ সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। শুধু আচার বানিয়ে খেলেই হবে না কাঁচা বা রান্না করেও খেতে হবে। কাঁচা জলপাই শরীরের নানান পুষ্টি যোগায়। নিম্নে এর আরো পুষ্টিগুন দেওয়া হলো —-

জলপাইয়ে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে , যা দেহের ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুন পরিমানে।

চোখ ওঠা , রাতকানা , চোখের পাতায় ইনফেকশন জনিত সমস্যাগুলো দূর করে জলপাই ফল।

জলপাইতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামন ‘স ‘ ও ‘এ ‘। এই ভিটামিন দুটি চোখের বিভিন্ন রোগকে দূর করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন নিয়ম করে জলপাই খেলে ত্বক , চুল , দাঁত ও হাড় মজবুত থাকে।

জলপাই দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে দেহের জন্য ক্ষতিকর লাইপোপ্রোটিনের পরিমান কমে যায়। হৃদপিন্ড সঠিকভাবে কাজ করে।

নিয়মিত কাঁচা জলপাই খেলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর , বাতের ব্যথা কিংবা আর্থাইটিসের পরিমান কমে যায়।

জলপাইয়ের তেল যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য খুবই উপকারী। জলপাই ও এর তেলে কোনো কোলেস্টরল বা চর্বি নেই। তাই রক্তে চর্বি বা লিপিড জমে যাওয়ার ও কোনো ভয় নেই।

জলপাই শরীরে দরকারি ভিটামিন ও অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করে। 

জলপাইতে প্রচুর পুষ্টিকর ও খনিজ উপাদান আছে। যেমন , সোডিয়াম , পটাসিয়াম , আয়রন , ফসফরাস এবং আয়োডিন।

জলপাইয়ে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার রয়েছে। ফলে এটা সবজি ‍ও ফল দুটোরই কাজ করে।

রক্ত বেশি জমাট বাঁধা থেকে অনেক সময় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন অথবা রক্তনালীর ভিতরে রক্তের ঘনত্ব মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে জলপাই।

জলপাইয়ের উপকারিতা 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে : গবেষনা অনুসারে , জলপাইয়ে অ্যান্টিডায়াবেটিকে বৈশিষ্ট পাওয়া যায় যা শরীরে ইনসুলিনের পরিমান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসের লক্ষনগুলি কমাতে বা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রন করে : জলপাই পাতার নির্যাস শুধুমাত্র রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে নয় , কোলেস্টরল ও নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায় : জলপাই পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। 

ক্যানসার প্রতিরোধ করে : কালো জলপাই ভিটামিন –ই এর বড় উৎস। যা ফ্রি র্যা ডিকেন ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ওযন নিয়ন্ত্রনে থাকে। জলপাইয়ের ভিটামিন – ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয় ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে। সর্দি , জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

হাড়ের ক্ষয়রোধ করে : জলপাইয়ের মনো স্যাচুরেটেড চর্বিতে থাকে প্রদাহবিরোধী উপাদান। বয়সের কারনে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয়। হাড়ের ক্ষয়রোধ করে জলপাই তেল।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : জলপাইয়ে যে খাদ্যআঁশ আছে তা মানুষের দেহের পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সহায়তা করে।

অ্যালার্জি প্রতিরোধে জলপাই : গবেষনায় দেখা গেছে , জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ওজন কমায় : যখন জলপাইয়ের মোনো – স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্য খাবারে বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে গ্রহন করা হয় তখন তা দেহের ভেতরের ফ্যাট সেলকে ভাঙতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেলে ও রয়েছে লো কোলেস্টরল যা ওযন কমাতে এবং ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে।

চোখ ভালো রাখে : চোখের স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য ভিটামিন এ এর প্রয়োজন হয় যা জলপাইয়ে রয়েছে। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। যাদের ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে তা ঘাটতি পূরন করার জন্য জলপাইয়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত জলপাই খেতে পারলে ভিটামিন এ এর অভাব পূরন করা যায়। এছাড়া জীবাণুর আক্রমন , চোখ ওঠা , চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করে এটি।

ত্বক ও চুলের যত্নে : জলপাইয়ের পুষ্টিগুন আমাদের শরীরের সুস্থ রাখার পাশাপাশি ত্বকের ও চুলের যত্নে অনেক কার্যকারী। জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়ায় লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এতে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়। এবং জলপাইয়ের ভিটামিন – ই ত্বকে মসৃন ভাব আনে।

পিত্তথলিতে পাথর জমতে বাধা দেয় : নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিক ভাবে কাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবনতা কমে যায়। তাই নিয়মিত জলপাই খাওয়া প্রয়োজন।

পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে : অনেকেরই গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে জলপাই। নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কম হয়। বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে হয়। 

Leave a comment