স্বাস্থ্য বিষয়

পিরিয়ড বা মাসিক মেয়েদের খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এই পিরিয়ড বা মাসিক মেয়েদের প্রতিমাসের কমন একটি চক্র। পিরিয়ডের ব্যথা প্রতিটা মেয়েরই সহ্য করতে হয়। অধিকাংশ ছেলেই ভাবে যে এ ব্যথাটা তেমন কিছুই না। এই ব্যথাটা যে কতটা যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে এবং হয়ে থাকে তা শুধুমাত্র মেয়েরাই বুঝে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা সামান্য আবার অনেকের ক্ষেত্রে খুবই বাজে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানার উপায় আছে যেটাকে বলা হয় ঘরোয়া উপায়। আজকে আমরা পিরিয়ড বিষয় নানান প্রশ্ন এবং অজানা তথ্য সম্পর্কে জানবো। তবে সর্ব প্রথম আমরা জানবো পিরিয়ড কি?

পিরিয়ড কিঃ প্রতিমাসে হরমোনের কারনে মেয়েদের জরায়ু চক্রকে এক ধরনের পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনের ফলে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে আর একেই মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে মেয়েদের প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক  বা পিরিয়ড বলে। মেয়েদের পিরিয়ড সাধারতন ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় এবং ৪৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত প্রতিমাসেই একবার হয়ে থাকে। এই পিরিয়ডের ব্যথা মেয়েদের স্বাভাবিক কাজে অনেক বাধা দিয়ে থাকে। এখন জানবো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

পিরিয়ড হলেই মেয়েরা চিন্তায় পরে যায় সর্ব প্রথম মাথায় আসে পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে। আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে ঘরে বসেও এই ব্যথা থেকে উপশম পেতে পারেন। মাসিকের ব্যথা দূর করার উপায় বা পদ্ধতিগুলো হলোঃ 

১। গরম সেঁক দেওয়াঃ

প্রাচীন কাল থেকেই গরম সেঁক দেওয়ার পদ্ধতি প্রচলিত। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক দিলে দ্রুত ব্যথা কমে যায়। গবেষনায় দেখা গেছে যে, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য ঔষধের চেয়েও গরম সেঁক বেশি উপকারী। গরম সেঁক দেওয়ার ধরা বাধা তেমন কোন নিয়ম নেই। আপনি হট ওয়াটার ব্যাগ বা যে কোন গরম জিনিস দিয়ে পেতের উপরে ধরে রাখলে দেখবেন আপনার ব্যথা কমে যাচ্ছে নিমিষেই। মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য এখনো গ্রাম অঞ্চলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

২। আদা খেতে পারেনঃ

আদা মাসিকের বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানো সাহায্য করে। পিরিয়ড চলাকালিন সময় আপনি প্রতিদিন ২/৩ বেলা নিয়ম করে আদা খেতে পারেন। আদা কিভাবে খাবেন? আপনি যে কোন ভাবেই আদা খেতে পারেন যেমন চায়ের সঙ্গে, এমনি চিবিয়ে বা গরম পানির সাথে।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ

গবেষনায় দেখা যাচ্ছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের পিরিয়ডের ব্যথা অনেক আংশে কম হয়ে থাকে। অনেকে বলতে পারে যে ব্যায়াম আবার কিভাবে করবো? ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে জিম করতে হবে না। আপনি প্রতিদিন হাটাহাটি, দৌড়ানো, সাতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদির মাধ্যমেও ব্যায়ামের কাজ হয়ে যায়। পিরিয়ডের ব্যাথা চলা কালিন সময় অনেকেই ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকে। আপনি একটু হাটাহাটি বা বাইরে ঘুরে আসতে পারেন প্রতিদিন। যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করে তাদের মাসিকের ব্যথা অনেকটাই কম হয়ে থাকে আপনি আশে পাশে খেয়াল করে দেখতে পারেন। পাশাপাশি শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।

৪। মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুনঃ

বিভিন্ন মানুষিক চাপ বা মাসিকের ব্যথার ভয় যাদের মধ্যে বেশি কাজ করে তাদের মাসিকের ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। আপনার সকল মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলে দিন এবং হাসিখুসি থাকেন দেখবেন আপনার ব্যথা কমে গেছে।

৫। ভিটামিন যুক্ত খাবার খানঃ

মাসিকের বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য ভিটামিন যুক্ত খাবার বিশেষ ভূমিকা রাখে। যারা মাসিকের সময় ব্যথায় ভোগের তারা সবসময় ভিটামিন যুক্ত খাবার খাবেন। যেমনঃ মাছ, ডিম, শাকসবজি, বাদাম, বাঁধাকপি, কলা ইত্যাদি। এ সকল খাবার খেলে দেখবেন আপনার মাসিকের পেটের ব্যথা কমে যাবে।

৬। পেট ম্যাসাজ করুনঃ

তলপেটে ব্যথা বা পিরিয়ডের ব্যথা করলে আলতোভাবে পেটে ম্যাসাজ করলে অথবা পেটে চাপ দিয়ে ধরে রাখলেও ব্যথা অনেক কমে যাবে।

৭। প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানঃ

পিরিয়ড চলা কালিন সময় দেখা যায় মেয়েরা অনেক মানসিক সমস্যায় ভুগেন এবং ঠিকমত ঘুমায় না, রাত জেগে বসে থাকে যার ফলে শরীর দূর্বল হয়ে পরে। এ সকল কারনেও কিন্তু পিরিয়ডের ব্যথা বেড়ে যায় তাই সময় মত বেশি রাত না জেগে প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান। পর্যাপ্ত ঘুম পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি অন্যমত পদ্ধতি।

৭. হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুনঃ

পিরিয়ড চলাকালিন সময় বা ব্যথা করলে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন এতে আপনার পিরিয়ডের ব্যথা কমবে এবং পাশাপাশি আপনি রিল্যাক্ম ফিল করবেন।

৮। পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

পিরিয়ডের সময় প্রচুর পানি পান করুন। সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শরবত, ফলের রস, আদা-লেবু-পুদিনা পাতাযুক্ত চা পান করতে পারেন।

  • – পিরিয়ডের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে দেয়। 
  • – অ্যালোভেরা রসের সাথে মধু মিশিয়ে একটি জুস তৈরি করে ফেলুন।
  • – পেট ব্যাথা শুরু হলে অন্য যেকোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
  • – দারুচিনি ও ব্যবহার করা যায়। আপনারা জানেন কি দারুচিনি ব্যাথা কমাতে কতটা উপযোগী।
  • – মাসিকের সময় বিভিন্ন অবস্থানে শুয়ে থাকলে অনেক সময় কিছুটা সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন – স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম

আরো পড়ুন – স্থায়ীভাবে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আরো পড়ুন – গলা ব্যথা হলে করণীয় কি?

পিরিয়ডের সময় করণীয় কি?

  • – পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করুন। চার থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করুন এবং একই প্যাড এক বারের বেশি ব্যবহার করবেন না।
  • – সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকার চেষ্টা করুন।
  • – বাইরের খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন এবং প্রচুর পানি পান করুন।
  • – ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এড়াতে প্রতিদিন গোসল করুন।
  • – ব্যবহৃত কাপড় ও অন্তর্বাস পরিষ্কার করে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন।
  • – ভারী কাজ, ব্যায়াম, সাঁতার বা সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকুন।
  • – মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • – ভিটামিন যুক্ত খাবার খান এবং বিশ্রাম নিন।

আরো পড়ুন – যে কোন ধরনের এলার্জি দূর করার উপায়

পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়

আমাদের সময় অধিকাংশ পুরুষ মেয়েদের পিরিয়ড হলে ভাবে এটা কিছুই না। কিন্তু আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। পিরিয়ডের সময় আপনি স্বামী হিসাবে আপনার অনেক দায়িত্ব আছে।

স্ত্রীকে বেশি বেশি সময় দিন এবং যতটা সম্ভব তার পাশে থাকুন। তার প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন প্যাড কিনে এনে বাসায় রাখুন। পিরিয়ড চলা কালিন সময় প্রয়োজনে বাসার কিছু কাজ আপনি করুন এতে আপানার স্ত্রীর একটু উপশন হবে।

কোন ভাবেই পিরিয়ড চলার সময় স্ত্রীর সাথে সহবাস করবেন না।

আরো পড়ুন – পেটের ব্যথা কমানোর সহজ উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য আইবুপ্রোফেন খুব ভাল কাজ করে। এই ঔষধ খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে বথা কমে যায়।

আইবুপ্রোফেন ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে: প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর ঔষধ থেতে হয়। এটি ভরা পেতে সেবন করতে হয়। সাধারনত পিরিয়ডের ব্যতার জন্য ১ থেকে ২ দিনের বেশি এই ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

অনেকে আবার ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খেয়ে থাকেন। প্যারাসিটামল ব্যথার জন্য ভাল কাজ করে কিন্তু আইবুপ্রোফেন প্যারাসিটামলের চেয়ের ভাল কার্যকর। অনেক সময় আইবুপ্রোফেন খাওয়ার সময় গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকে।

ব্যথা যদি কোনভাবেই না কমে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।  তবে ঔষধ খাওয়ার পূর্বে আপনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দিন। কোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক না।

পিরিয়ড বা মাসিক নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর|

পিরিয়ডের সময় রোজা রাখা যাবে?

না। ইসলামে পিরিয়ডের সময় রোজা রাখতে নিষেধ করে দিয়েছে।

পিরিয়ডের ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

পিরিয়ডের ব্যথা  ১২-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয় সেই ব্যথা। তবে অনেকের কম বেশি হতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়?

পিরিয়ডের ব্যথা সাধারনত তলপেটে হয়ে থাকে। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে কোমর, ঊরু ও পা পর্যন্ত। এমনকি স্তনেও ব্যাথা হয় অনেকের।

পিরিয়ড দেরি হওয়ার কারণ?

প্রেগনেন্ট হলে সাধারনত পিরিয়ড মিস হয়। এছাড়াও পিল খেলে পিরিয়ড দেরিতে হয়ে থাকে অনেক সময় আগেও হয়।  লম্বা সময় স্ট্রেসে থাকলে অনেকেরই মাসিক দেরিতে হতে পারে। টিনেজ বয়সী ও মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওজন কম হলে সময়মতো পিরিয়ড নাও হতে পারে। মনোনিউক্লিওসিস, ঠাণ্ডা, সর্দি, গলার ইনফেকশন- এ ধরনের সমস্যায় পিরিয়ড লেট হতে পারে।

পিরিয়ডের সময় সহবাস করা যায়?

না। পিরিয়ডের সময় সহবাস করতে ডাক্তাররা নিষেধ করে দিয়েছে এছাড়া ইসলামেও নিষেধ আছে।

কত বছর বয়সে মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়?

আগে ১৪ থেকে ১৬ বছর মেয়েদের পিরিয়ড শুরুর গড় বয়স হিসেবে ধরা হত। তবে আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১২-১৩ বছর বয়সে পিরিয়ড শুরু হয়ে যাচ্ছে।

গর্ভবতী হওয়ার পর কি মাসিক হয়?

এক কথায়, গর্ভাবস্থায় মাসিক হতে পারে না।

WWW.KOLIKATAHERBAL.COM একটি ইউনানি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে পুরুষ ও মাহিলাদের গোপন রোগের চিকিৎসা করা হয়। আপনার যে কোন সমস্যায় যোগাযোগ করুনঃ 01763663333

Leave a comment