স্বাস্থ্য বিষয়

আমাদের কাছে বর্তমান যুগে খুবই পরিচিত একটি সমস্যা হলো পাইলস। এটি মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। পাইলস এর ফলে রক্তনালিগুলো বড় হয় এবং ভাসকুলার কুশন তৈরি হয়ে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।এটি সাধারণত দুই স্থানে হয়ে থাকে মলদ্বারের ভিতরে ও বাইরে। পাইলস হলে সাধারণত চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়।
 
মলদ্বারের নিচের অংশে গোল আকারে ফুলে উঠে, ফলে যে কোন সময় সেই জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক। লজ্জায় অনেকে এ সমস্যার কথাটি মানুষের সামনে বলতে পারে না ফলে অনেকেই ভুল চিকিৎসার শিকার হন যার ফলে স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হয়।

জেনে নিন পাইলস কি?

মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ হলো পাইলস। পাইলস কে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হেমরোয়েডস বলা হয়।

পাইলস কত ধরণের এবং কি কি?

পাইলস সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

১. অভ্যন্তরীণ পাইলস অথবা ইন্টারনাল পাইলস

২. বাহ্যিক পাইলস অথবা এক্সটারনাল পাইলস


প্রশ্ন: অভ্যন্তরীণ পাইলস অথবা ইন্টারনাল পাইলস কি বা কাকে বলে?
যে পাইলস মলদ্বারের ভিতর হয়ে থাকে, তাকে অভ্যন্তরীণ পাইলস অথবা ইন্টার্নাল পাইলস বলা হয়।

প্রশ্ন: বাহ্যিক পাইলস অথবা এক্সটারনাল পাইলস কি বা কাকে বলে?
যে পাইলস মলদ্বারের বাহিরে হয়ে থাকে, তাকে বাহ্যিক পাইলস অথবা এক্সটারনাল পাইলস।

প্রশ্ন: পাইলস কি ভালো হয় ?

অব্যশই

 

পাইলস এর লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা সহ বিস্তারিত জানুন-

পাইলস হলে সাধারণত এই লক্ষণগুলো দেখে বোঝা যায় কারো যদি পাইলস হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই বিনা অপারেশনে হারবাল উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে সেটি নির্ভর করে কোন ধরনের পাইলস হয়েছে তার ওপর। পাইলস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। পাইলসের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারেঃ

১. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া।
২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে।
৩. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

১. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
২. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

পাইলস হওয়ার কারনঃ-

পাইলসের সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ পাইলস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। পাইলস হওয়ার পিছনে এই কারণগুলো থাকতে পারে।
 
১. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
২. শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
৩. শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
৪. গর্ভাবস্থা।
৫. লিভার সিরোসিস।
৬. মল ত্যাগে বেশী চাপ দেয়া।
৭.  অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ)ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল   মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা।
৮. টয়লেটে বেশী সময় ব্যয় করা।
৯. বৃদ্ধ বয়স।
১০.পরিবারে কারও পাইলস থাকা।
১১. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি।
১২.কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
১৩. স্থূলতা।
১৪. বেশি সময় বসে থাকা।
১৫. দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা।
১৬. হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য।
১৭. পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায় ঘাটতি।
১৮. ব্যায়াম না করা।
১৯. পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি।
২০. জন্মগত।
২১. গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে। ফলে, কোলনের শিরায় চাপ পড়ে বলে শিরা স্ফীত হয়। 

যে কারণে পাইলস হয়। প্রথম দিকে ওষুধ ও সাবধানতা মেনে চললে এই রোগ সেরে যায়।  তবে, জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।

পাইলস থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন-

কারো যদি পাইলস হয়, তাহলে তার মলত্যাগের পর রক্ত যাবে এবং রক্ত যাওয়ার সঙ্গে সাধারণত কোনো ব্যথা হবে না। কাজেই পাইলস বা হেমোরয়েড যদি প্রথম ধাপে হয়, সে ক্ষেত্রে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছুই থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়।

কারো যদি দ্বিতীয় ধাপের হেমোরয়েড হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়, সাধারণত ব্যথা হয় না এবং মলত্যাগের পর মনে হয় ভেতর থেকে কি যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসছে। এবং সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়।

কারো যদি তৃতীয় ধাপের হেমোরয়েড হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হয়, আগে এমনিতেই ঢুকে যেত কিন্তু এখন চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়। কারো যদি চতুর্থ ধাপের হোমোরয়েড হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আগে মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংসটি বের হতো সেটি এমনিতেই ঢুকে যেত, এখন আর ঢুকছে না এবং ব্যথা হচ্ছে।এটিকে আমরা বলে থাকি থ্রববোসড হেমোরয়েড। কাজেই পাইলসের চিকিৎসা তার ধরনের ওপর নির্ভর করে।

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা- 

অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা ঘরোয়া ভাবে ও করা সম্ভব। পাইলস থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যেন আপনার মল কখনো শক্ত না হয়। শক্ত না হওয়ার জন্য  আপনার খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। পাইলস এর লক্ষণ পাওয়া গেলে  তৎক্ষনাত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকেই কম টাকায় চিকিৎসা পাওয়ার জন্য  হাতুড়ি ডাক্তারের কাছে যায়। উক্ত ডাক্তারেরা রোগীকে  মলদ্বারে এক ধরনের মলম বা  এসিড জাতীয় কিছু লাগাতে বলে। তখনই শুরু হয় মারাত্মক সমস্যা। মলদ্বারে এসিড জাতীয় কিছু লাগানোর ফলে সেই জায়গাটা পুড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে মলদ্বার কেটে  ফেলা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় থাকে না।  এর ফলে রোগীকে সারাজীবনের জন্য পেটের মধ্যে বাগ লাগিয়ে চলা-ফেরা করতে হয়। পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরফ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ বরফ দেহে রক্ত চলাচল সচল করতে সহায়তা করে এবং ব্যথা দূর করে থাকে।

এক টুকরো বরফ নিয়ে মলদ্বারের আক্রান্ত জায়গাটুকুতে তে  দিলে আরাম পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রেই পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করে পাইলস মোকাবিলা করা যায়।  আপনার মলদ্বার অত্যন্ত ব্যথা করলে আপনি অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এটি লাগানোর সাথে সাথে উক্ত স্থান কিছুক্ষণ জ্বালাপোড়া করবে তারপর আস্তে আস্তে কমে যাবে। এই পদ্ধতি সারাদিনে বেশ কয়েকবার অবলম্বন করুন।

এছাড়াও আপনি  ১ গ্লাস পানির সাথে ১ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন। পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা  পালনে নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। মল শক্ত হয় এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। অতিরিক্ত গরুর মাংশ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিমাণ মতো আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। পাইলসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পাইলসের লক্ষণ ধরা দেওয়ার পূর্বে এ সকল খাবার খেতে হবে।দরকার হলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পাইলস এর  ঔষধ  গ্রহণ করতে হবে। পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা আপনি বাসায় বসে কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন।
 
চিকিৎসাঃ তবে আসলেই ভয়ের কিছু নেই, কারন এখন আমাদের দেশে উন্নত হারবাল চিকিৎসা রয়েছে যার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব। কলিকাতা হারবাল আপনাকে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আস্থা দিচ্ছে যে পাইলস এখন আর কোন বড় সমস্যা নয়। শুধুমাত্র আস্থা নয় কলিকাতা হারবাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে হারবাল পদ্ধতিতে অত্যন্ত নির্ভুলতার মাধ্যমে পাইলস সমস্যার সমাধান করে থাকেন। দেশের শীর্ষ স্থানীয় হারবাল চিকিৎসালয় কলিকাতা হারবালের কাছ থেকে চিকিৎসা নিন, নিজেকে সুস্থ রাখুন সাথে নিজের পরিবারকে সুস্থ রাখুন। পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়। এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশন এর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।


চলিত অপারেশনের মতই আরেকটি অপারেশন হলো লেজার অপারেশন। পার্থক্য শুধু এটাই যে, লেজার অপারেশনে বিম ব্যবহার করা হয়। এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ ব্যবহার করে কাটাকাটির কাজ করা হয়। চলিত অপারেশনের মতো লেজার অপারেশনে ক্ষত স্থান হবে তিনটি । লেজার অপারেশন ও সাধারণত অপারেশন  এর মধ্যে তেমন কিছু তফাৎ নেই কারণ দুটি অপারেশনেই সমান ব্যথা অনুভব করতে হয়। ক্ষত স্থান টি শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে।
 
আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য রোগী আছে যারা মলদ্বারে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক সময় লজ্জাবশত বলেন না কিংবা ভুল চিকিৎসার শিকার হন, এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কখনও কখনও এমন পর্যায়ে উপস্থিত হন যে তখন আর অপারেশনের বিকল্প কিছু থাকে না। কিন্তু যদি সবাই মলদ্বারের রোগ সম্পর্কে সচেতন হন, সঠিক সময়ে চিকিৎসায় পারদর্শী বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন তবে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে বিনা অপারেশনে এর চিকিৎসা সম্ভব। মলদ্বারে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়।পায়ুপথের যত সমস্যা যেমন: এনাল ফিসার, পাইলস, রেকটাল পলিপ, রেকটাল ক্যানসার, আইবিএস, পাইলোনিডাল-সাইনাস, হেমাটোমা, ফিস্টুলা, প্রোলাপস, ফোড়া বা এবসেস,এনাল আবসেস, রেকটাল প্রলাপস, এনাল ওয়াট, প্রকটালজিয়া-ফোগাস ইত্যাদি। রোগ অনুসারে এগুলোর চিকিৎসার ধরনও বিভিন্ন।

Leave a comment